মোস্তফা কামাল সুমন: নতুন শিক্ষাবর্ষের প্রথম সপ্তাহ শেষ। রোববার দ্বিতীয় সপ্তাহের প্রথম দিন ছিল। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের জন্য নতুন শিক্ষাক্রম হাতে নিয়েছে। বেøন্ডেড লানিং বা মিশ্র পদ্ধতির এই শিক্ষাক্রম চালু হয়েছে দেশব্যাপী। উন্নত বিশে^র সাথে তাল মিলিয়ে যুগপোযুগী এই শিক্ষাক্রম অবশ্যই দেশের জন্য যৌক্তিক। এবং শতভাগ কার্যকর হবে এটা ধরেই নেওয়া যায়। কিন্তু আমাদের প্রিয় গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ঘাটতি হয়তো থাকবে না তখন? তবে হঠাৎ কেন এই লেখা অবতর তা নিয়ে সংশয় জেগেছে হয়তো আপনাদের মনে। ঠিক আমার মনেও সংশয় উঠায় এই লেখার চেষ্টা।
ওইদিন সন্ধ্যায় আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ইমেজ মেটালিকে বসে আছি। এমন সময় দুইজন শিক্ষক আসলেন। তাদের একজন উপজেলার একটি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অপরজন অন্য একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষক। তাদের আলোচনায় উঠে এলো উপজেলায় প্রকৃত মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাবের চিত্র। শিক্ষকদ্বয়ের আলোচনায় ঘুরে ফিরে আসতে লাগলো দিনাজপুরের আমেনা বাকী বিদ্যালয়ের কথা। প্রধান শিক্ষক একে একে বলতে শুরু করলেন, তার পরিচিত কে কে এবার আমেনা বাকীতে চান্স পেয়ে ভর্তি হয়েছে। তিনি অপর শিক্ষককে বললেন, আগামী বছর তাঁর সন্তানের জন্য আমেনা বাকীতে ভর্তির ব্যবস্থা করতে। সংগত কারণে শিক্ষক মহোদয়ের নাম প্রকাশ থেকে বিরতি থাকছি।
এই আলোচনাটি আমাকে দারুণ ভাবে নাড়া দিলো। আসলেই কি উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে উপজেলার সচেতন অভিভাবকদের আস্থায় আছে। তারা কি উপজেলার সচেতন অভিভাবকদের আস্থা স্থাপনের জন্য যোগ্য হয়ে উঠেছে। গত ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২২ বিস্তরণের মাস্টার ট্রেইনারের প্রশিক্ষণে যাবো রংপুরে। এই জন্য সকাল ৭টার দিকে থানা মোড় চারমাথায় বনফুল হোটেলের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। এসময় দেখলাম রাজমতি সুপার মার্কেটের দুইজন সুপরিচিত ব্যবসায়ী এসেছে। তাদের জিজ্ঞাসা করলাম এতো সকালে কোথায় যাচ্ছেন। উত্তরে জানানো আমেনা বাকীতে যাবে সন্তানদের জন্য ভর্তির ফরম উঠাতে। বছর খানেক আগে দেখেছি, শুক্রবার উপজেলার সচেতন অভিভাবকগণ বাস রিজার্ভ করে তাদের সন্তানদের দেখতে আমেনা বাকী বিদ্যালয়ে যায়। এবং যেকোন ছুটির আগের দিন এ রকম প্রচুর বাস যায় আমেনা বাকীতে।
এই চিত্র শুধু একদিকের। মাত্র একটি প্রতিষ্ঠানকে উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করা। আরও কত প্রতিষ্ঠান যে আছে তা আমাদের হয়তো অগোচরেই। আস্থা সংকট একটি বড় বিষয়। গাইবান্ধা সদরের বাংলা বাজারে উপজেলা পরিষদের ব্যবস্থাপনায় একটি মাঝারি মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। প্রতিষ্ঠানটি দেখে আমার ভালো লাগে। আব্দুল হান্নান মহোদয় যখন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। আমি আর বর্ষীয়ান সাংবাদিক কৃষ্ণ কুমার চাকী তাঁর কাছে গাইবান্ধা সদরের আদলে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগ একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার আহবান জানাই। কিন্তু তিনি উপজেলার সার্বিক বাস্তবতা আমাদের সামনে তুলে ধরেন একটি উদাাহরণের মাধ্যমে। আর এই বাস্তবতার কারণে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন।
আজ আবারও বলতে ইচ্ছে, গড়ে উঠুক গোবিন্দগঞ্জে মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যে প্রতিষ্ঠান উপজেলার সচেতন অভিভাবকদের আস্থার প্রতীক হবে। আমরা সবাই সেই প্রতিষ্ঠানের সহযোগী হতে চাই।