গোবিন্দগঞ্জে ইপিজেড গড়ে উঠলে আপনি কিভাবে লাভবান হবেন

মোস্তফা কামাল সুমন: গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে দেশের ১০ম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (ইপিজেড) স্থাপনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। রংপুর চিনিকলের সাহেবগঞ্জ বাণিজ্যিক খামারের জমিতে গড়া তোলা হবে এই ইপিজেড। আর তার নাম দেওয়া হয়েছে রংপুর রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (আরইপিজেড)। গোবিন্দগঞ্জ তথা এর পাশ্ববর্তী উপজেলাগুলোর আর্থসামাজিক উন্নয়নের একটি বৈপ্লবিক পদক্ষেপ এই ইপিজেড গড়ে তোলার উদ্যোগ। ভৌগলিক গুরুত্ব ও যোগাযোগ ব্যবস্থার সুবিধার কারণে বৃহত্তর রংপুর জেলার মধ্যে সবচেয়ে উপযুক্ত জায়গা গোবিন্দগঞ্জের সাহেবগঞ্জ বাণিজ্যিক খামার। সরকারের নিজের দখলে থাকা ১৮৩২ একর জায়গায় অনায়াসে গড়ে তোলা সম্ভব দেশের বৃহত্তম ইপিজেড। আরইপিজেড গোবিন্দগঞ্জে গড়ে উঠলে কি কি সুবিধা পেয়ে আপনি লাভবান হবেন গোবিখবরের ভিজিটরদের জন্য তার চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো:

প্রথমে আমরা অবগত হই ইপিজেড কি: ইপিজেড শব্দটি একটি ইংরেজি বাক্যের সংক্ষিপ্ত রুপ। পুরো নাম এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন (ইপিজেড)। এর বাংলা অর্থ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা। এটি একটি বিশেষায়িত এলাকা। ইপিজেডে প্রচুর পরিমান কলকারখানা গড়ে উঠে। ইপিজেডে উৎপাদিত পণ্য সরাসরি বিদেশে রপ্তানি করা হয়। যা দেশের বৈদেশিক মূদ্রা অর্জনের অন্যতম মাধ্যম। ঢাকার আশুলিয়ার গনকবাড়ী, নীলফামারির উত্তরা ইপিজেড সহ দেশে বর্তমানে ৮টি ইপিজেড আছে। কুমিল্লায় ৯ম এবং গোবিন্দগঞ্জে ১০ম ইপিজেড গড়ে উঠবে।

কর্মসংস্থান: আরইপিজেডে প্রাথমিক ভাবে ২ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আপনারা অবগত গোবিন্দগঞ্জে থেকে হাজার হাজার শ্রমিক দেশের বিভিন্ন জায়গায় কাজ করে। এতো কাজ করার পরও গোবিন্দগঞ্জে আপনার আমার ছেলে মেয়ে ভাই বোন আত্মীয় স্বজনের মধ্যে প্রচুর বেকার। শিক্ষিত অল্প শিক্ষিত সবার কাজের সুযোগ থাকবে এখানে। কলকারখানার চাকুরির জন্য আপনাকে আর দেশের অন্য জায়গায় যেতে হবে না। বরং সারাদেশ থেকে মানুষ গোবিন্দগঞ্জে আসবে চাকুরি করতে।

ভূমির উন্নয়ন: ইপিজেড স্থাপিত হলে ইপিজেড এলাকার চার পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে জমির উন্নয়ন হয়ে মূল্য বেড়ে যাবে। ইপিজেডে কর্মসংস্থান হওয়া ২ লাখ মানুষের জন্য আবাসন নিশ্চিত করতে অনেকেই জমি কিনবে। জমির মূল্য বেড়ে পাওয়ায় আপনার আমার আর্থিক সম্পদও বেড়ে যাবে।

বাসাবাড়ি ভাড়া থেকে আয়: ইপিজেড স্থাপিত হলে শ্রমিক ও কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য থাকার জায়গার দরকার হবে। আমরা বাসাবাড়ি করে ভাড়া দিয়ে বর্তমানের তুলনায় কয়েক গুন বেশি আয় করতে পারো। শুধু যে পাঁকা বাড়ি থেকেই আয় হবে তেমন নয়। সাধারণ টিনের বাড়ি করে ভাড়া দিলেও সেখান থেকে আয় হবে।

সম্পুরক কলকারখানা: ইপিজেড স্থাপিত হবে বড় বড় শিল্প কলকারখানা। সেই শিল্প কলকারখানা সচল রাখতে প্রয়োজন হবে অনেক ছোট বড় হাজার হাজার শিল্প কলকারখানার। আপনার আমার উদ্যোগে উপজেলাব্যাপী গড়ে উঠবে ছোট বড় হাজার হাজার শিল্প কলকারখানা। আপনি নিজেও একটি কলকারখানা স্থাপন করে অনায়াসে নিজের অবস্থা পরিবর্তন করতে পারেন।

ট্রাক ব্যবসার সুদিন: যারা ট্রাকের ব্যবসার সাথে জড়িত তারা অনেকই নিয়মিত ভাড়া পান না। কিন্তু ইপিজেড স্থাপিত হলে কলকারখানার উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করতে অবশ্যই ট্রাক লবি কাভার্ড ভ্যানের প্রয়োজন হবে। এতে আপনি প্রতিদিন নিশ্চিত ভাড়া পাবেন।

অটো, রিকশা ও ভ্যান চালকদের সুদিন: ইপিজেড স্থাপিত হলে মানুষের চলাফেরা বেড়ে যাবে। যাতে করে অটো, রিকশা ও ভ্যান চালকদের আয় বেড়ে যাবে। তারা প্রতিদিন যেমন ইপিজেডে যাবেন তেমনি নানা প্রয়োজনে উপজেলার মাঝে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাতায়াত করবেন।

ব্যবসা বাণিজ্যে বিপ্লব: বর্তমানে উপজেলায় মাসে নিয়মিত ২০ হাজার টাকা আয় করে এমন লোকের সংখ্যা আনুমানিক ১০ হাজারের বেশি হবে না। এই হাজার দশেক লোকের কারণে গোবিন্দগঞ্জের ব্যবসা বাণিজ্য জেলা শুধু নয় আশেপাশের কয়েকটি জেলার মধ্যে নাম করা। একবার চিন্তা করুণ এই সংখ্যা যখন দুই আড়াই লাখ হবে তখন আপনার ব্যবসা বাণিজ্যে কেমন হবে।

উন্নতমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: ইপিজেড স্থাপনকারী কর্তৃপক্ষ বেপজা ইপিজেড এলাকায় একটি আধুনিক উন্নতমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবে। আপনার সন্তানকে নিয়ে আর দূরে কোথায় গিয়ে থাকতে হবে না পড়াশুনার জন্য।

গোবিন্দগঞ্জে ইপিজেড স্থাপিত হলে উপজেলার আর্থসামাজিক চেহারা আমূল বদলে যাবে। জীবনযাত্রার মান ও মানুষের আর্থিক সামর্থ্য কল্পনাতীত উন্নতি হবে।