টাকার নয় গোবিন্দগঞ্জে বিবেকের ভোট হোক

মোস্তফা কামাল সুমন: ভোট মানুষের অমূল্য সম্পদ। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় ভোট একটি আমানত। মূলত নাগরিকগণ ভোটের মাধ্যমেই তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করে। এই অধিকার প্রয়োগ তাদের সাংবিধানিক ও নৈতিক অধিকার এবং সাথে ইমানী দায়িত্ব। নিজের বিবেক ব্যবহার করে একজন সভ্য মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করে। বহুকাল ধরে বহু দেশে এই অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করতে হয়েছে। দিতে হয়েছে অনেক প্রাণ। এখনো অনেক দেশেই নামমাত্র ভোটাধিকার প্রয়োগ ক্ষমতা আছে জনসাধারণের। আবার অনেক দেশেই এই অধিকারের যাচ্ছে তাই ব্যবহার করা হয়। অনুন্নত এমনকি উন্নয়নশীল দেশে এর অপব্যবহার খুব বেশি। সামান্য কিছু টাকার জন্য এই সবদেশে মহামূল্যবান ভোটাধিকার তারা বিসর্জন দিয়ে দেয়। অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মত বাংলাদেশেও এই ভোটের অপপ্রয়োগ সবসময় আলোচিত একটি বিষয়। ভোট আসলেই টাকা দিয়ে ভোট কেনাবেচার অভিযোগ উঠে। এবারও অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সাধারণ নির্বাচনে টাকার ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। জাতীয় সংসদীয় আসন ৩২. গাইবান্ধা-৪ গোবিন্দগঞ্জ আসনেও ভোটের এই অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ পৃথিবীর সভ্য রাষ্ট্রগুলোতে ভোটের আগে ভোটারগণ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে অনুদান প্রদান করেন। প্রার্থী সেই অনুদান ব্যবহার করে নির্বাচনী ব্যয় পরিচালনা করেন। নির্বাচন করতে ওইসব দেশে প্রার্থীর প্রচুর টাকা থাকতে হয় না। একজন খুব সাধারণ মানুষ নিজস্ব টাকা ছাড়াই নির্বাচনে অনায়াসে জয়লাভ করতে পারেন। তাই সেই দেশগুলোতে দূর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বজনপ্রীতি প্রায় শুণ্যের কোঠায়। তাদের নাগরিক সেবার মান অনেক উন্নত। কারণ প্রার্থীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও জয়লাভ করতে অসদাচারণ করতে হয় না। তার প্রচুর নিজস্ব টাকা খরচ না হওয়ায় তা তোলার তাগাদাও থাকে না। বরং জনগণের দেওয়া অনুদানেই তারা বারংবার নির্বাচন করতে পারে। সেই জন্য প্রার্থীকে সীমাহীন দূর্নীতি করতেও হয় না।

কিন্তু উল্টো চিত্র বাংলাদেশ সহ অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে। এই সবদেশে একজন প্রার্থীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও জয়লাভের জন্য নিজস্ব প্রচুর টাকা খরচ করতে হয়। সেই টাকা তুলতেই জয়ী প্রার্থীর মেয়াদের অর্ধেকের বেশি সময় যায়। সেই সাথে পরবর্তী নির্বাচনের জন্য টাকা সংগ্রহ ও ভবিষ্যত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাকে ক্ষমতার অপব্যবহার করতে হয়। এই ক্ষমতার অপব্যবহারের ফলেই দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও বৈষম্য বৃদ্ধি পায়। জনগণ নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হয়।

আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা আগামী পাঁচ বছর দেশ শাসন করবে। এই সময় জনগণের নাগরিক সেবা নিশ্চিত করার দায়িত্বও তাদের। একক সংসদীয় আসন গোবিন্দগঞ্জেও অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ সাধারণ নির্বাচন। এই নির্বাচনে এই আসনের জনগণ তাদের সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগ করবে। এই অধিকার প্রয়োগ হোক সভ্য বিবেক দ্বারা। টাকা বা অন্য কোন কিছু দ্বারা প্রবাভিত না হয়ে এই প্রত্যাশা রাখছি।